Blogger Widgets

Friday, November 17, 2017

নমামী বরাক

আমার বরাকঃ Pinki DrPinki Purkayastha Chandrani
সময়টা শৈশব, দিন তারিখ, সনের হিসেবটা,
লিপিবদ্ধ কোন এক জলফরিঙ্গের রঙিন পাখার অন্তরালে। 
বাবার হাত ধরে রোজ বিকেলে,
ঘুরে বেড়াতাম বরাকের তীরে। 
মধুরামুখ কি মিষ্টি নাম বলতো।
তার চেয়েও বেশী মিষ্টি সেই মুহূর্তেরা।
বাবা যখন শৈশবের আনন্দে মশগুল,
সবচেয়ে প্রিয় অসমবয়স্ক বন্ধুটির সাথে।
কখনো ছুটে বেড়াচ্ছেন।
বালু দিয়ে তৈরি করছেন খেলা ঘর।
কখনও বা চিনিয়ে দিচ্ছেন , এটা দ্রোণ ফুল।
ওটা বিশ কাঁটালি, ওদিকে যাসনে মেয়ে।
নৌকোর পর নৌকো আর,
মহাজালে মাছের সম্ভার দেখে অবাক হচ্ছি আমি।
হারিয়ে জাচ্ছি বারবার কুমির,জলদস্যু, মৎস্যকন্যার গল্পে।
আশ্চর্য নদী প্রেমিক লোক আমার বাবা।
এতো বছরের শিক্ষকতা দুধপাতিল ।
অন্নপূর্ণা ঘাট, সকাল বিকেল নদী পেরিয়ে।
তবু নিজের ছোট্ট মিনির হাত ধরে,
সূর্যকে বিদায় জানানো নদীরই কিনারায়।
শেষ বেলায় সুপুরী গাছে বাবুই পাখির বাসা দেখে,
যখন আমরা ফিরে আসতাম,
তখন আকাশের জানালায় উঁকি দিচ্ছে দু একটি তারা।
সেই তারারা আজও কথা বলতে আসে,
আমার রুক্ষ ব্যাল্কনির ওপারে।
নমামী উচ্ছ্বাসে ভাসছে শহর,
খবরটা এই মাত্র জানিয়ে দিয়ে গেল ,
এক নীল নয়না মাছরাঙা ।
ভালোবাসা বরাক,
আসলেই বাবা সঞ্চিত রেখেছেন আমার শৈশব,
দিগন্ত বিস্তৃত বরবক্রের গহীন বুকে।

Monday, November 13, 2017

নমামী বরাক ও আমরা

“Namami Barak...Celebrating the perennial spirit of Barak” থিম শুনা মাত্র মনটা খুশীতে ভরে গেলো। নদীর সন্তান আমরা, সারা বিশ্বকে নিয়ে আমাদের পালনকারিনী বরাকের উৎসব পালন করব, বিষয়টা সত্যি সত্যিই গর্ব এবং আনন্দের। Wetland Ecologist তো , তাই জলের প্রতি ভালোবাসাটা একটুক বেশীই, আর দিল্লীতে প্রবাসে আসছি বলেই হয়তো বরাকের জলে নীল যমুনার ছায়া খুঁজা মন, যমুনার জলেও খুঁজে ফেরে বরাকেরই মুখ। জাতীয় আন্তর্জাতিক সেমিনার, আলোচনা চক্র অথবা ইন্টারভিউ, আসাম বললেই লোকে জিজ্ঞেশ করে মাজুলি ? দীপর বিল ? কামাখ্যা। কারুর মুখে শুনিনি, নারায়ন ডহর গেছ? ভুবন? শনবিল , আহা চাতলা, কি সুন্দর। এইবার নমামীর দৌলতে হতো, ব্রহ্মপুত্রের মতো, বরাকও হবে পরিচিত। হয়তো চাতলা শনবিলও দীপরবিলের মতন প্রসিদ্ধি পাবে, হয়তো শক্তিসাধনার কেন্দ্রবিন্দু কামাখ্যা, শৈব তীর্থ উমানন্দের মতন, কাচাকান্তি, ভুবন, কপিলাশ্রমও ঠাই পাবে নিজের মর্যাদায়। তখনই বিশ্বের দরবারে স্থাপিত হবে আসামের পূর্ণ পরিচয়।
প্রাচীন কালে, মানুষ ছিল প্রকৃতির উপাসক, পাহাড়, নদী, গাছ পালা, অরন্যের পূজো করতো। বৈদিক মন্ত্রগুলোও তো নিবেদিত প্রকৃতিরই উদ্দেশ্যে। সরস্বতী নদীতীরে পঠন পাঠন সংস্কৃতির সূচনা হয়েছিল বলে , বিদ্যার দেবীর নামটাই হয়ে গেলো সরস্বতী। কিন্তু যেদিন প্রকৃতির দৈবী স্বরূপ হারিয়ে গেল মানুষের মন থেকে, সেদিন থেকেই প্রদূষণের বিষবাষ্পে ছেয়ে গেলো পৃথিবী। ত্রিভুবন তারিণী গঙ্গে আর ব্রজের সেই যমুনা আজ স্থানে স্থানে স্নানের ও অযোগ্য। ভাগ্যিস এখনও ব্রহ্মপুত্র , বরাক দুজনেই, এই অবস্থায় পৌঁছায়নি, হয়তো এই উৎসব নদী সংরক্ষণের বিষয়ে মানুষের ঘুম কিছুটা হলেও ভাঙিয়ে গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ ততোটা অন্ধকার হবে না।
এই উৎসবের লোগো দেখার আগে উপত্যকার কজনেই বা জানতেন যে বরাকের বুকে বসবাস রয়েছে দুর্লভ প্রজাতীর নাদেয় ডলফিনদের। ফু মাছ বা হু মাছের এই দুর্লভ প্রজাতি যারা আমাদের গর্ব হতে পারতো, আমাদের চোখের সামনে থেকেই হারিয়ে গেলো প্রায়, আর সেই খবর জানতে পারলোই বা কয়জন? ডঃ পাউলেন সিনহা স্যার এর তত্বাবধানে সোমাভারা, আর ডঃ নিলেন্দু ধর স্যারের নেতৃত্বে আমরা , ডলফিন নিয়ে যে কাজ করে আসছি, ১৭ -১৮ বছর ধরে যে উপত্যকার গ্রাম শহরে কথা বলে আসছি, প্রশাসনের কাছে সময়ে সময়ে দাবী রেখে আসছি , সেই সব খবরই বা রাখল কে। পাউলেন স্যারের তো ডক্টরেটও ডলফিনদের নিয়ে। এই উৎসবের দৌলতেইতো আজ উপত্যকার প্রত্যেকটা শিশুও ডলফিন নিয়ে গর্বিত। আর সত্যি বলতে কি, তাদের বাসস্থান ফিরিয়ে দিলে, সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে তাদের ফিরে আসাও নিশ্চিত।
২০০৯-২০১৩ ডঃ সুস্মিতা গুপ্তা ম্যাড্যাম এর তত্বাবধানে চাতলার জলের পোকা মাকড় নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে খুঁজে পেয়েছিলাম এমন কিছু পোকাদের যাদের ব্যবহার করে ম্যালেরিয়া মশাদের নির্মূল করা যেতে পারে, ডিডিটির মতন বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার না করেই। এই বিষয়ে অনেক গুলো গবেষণা পত্র ছাপা হয়েছে , পরবর্তী গবেষণাও চলছে কিন্তু কাজে লাগানো হচ্ছে কই । ডঃ অভিক গুপ্ত স্যারের তত্বাবধানে ডঃ কুলেন্দ্র চন্দ্র দাস, কাজ করেছেন বরাকের কচ্ছপের উপরে, সেই কচ্ছপেরা আজ লুপ্ত প্রায়। আজও উপত্যকার বিভিন্ন স্থান থেকে বনরুই, হরিন, কচ্ছপের মাংস বিক্রির খবর আসে, সেই ক্রেতা বিক্রেতারাতো বরাকেই সন্তান।
যে কাজ গুলোর কথা উল্লেখ করলাম, সেগুলো উদাহরন মাত্র, এখানকার বিশিষ্ট কলেজ গুলোর এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক- অধ্যাপিকারা, বরাকের জল হাওয়া মাটি পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে যে সব কাজ করাচ্ছেন , সেই গবেষণার ফল গুলো লাইব্রেরী, থেসিস আর গবেষণা পত্রে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে । সেগুলোর খোঁজ নিয়ে নদীর এই উৎসব কে সমৃদ্ধ করে তোলার দায় আমার, আপনার, আমাদের। সূর্য চন্দ্র গ্রহ তারা নদীর মতন নমামি শব্দটা ও সংস্কৃত থেকেই নেয়া। তাই প্রনমামি শব্দ নয় কেন বলে দুঃখ করবেন না। কাপ প্লেটের বাঙলা শব্দ পেয়ালা পিরিচ, অথবা চেয়ারের বাঙলা কেদারা ইত্যাদি যে শব্দ যে শহীদদের এই মাটিতেও কেউ ব্যবহার করেন না সেই বিষয়ে আমি নিশ্চিত। তাই নমামি নিয়ে এতো ভাবনার কিছুই নেই।
কেউ ডাকলে ডাকবে, না ডাকলে নেই, নদী আমার- আপনার ,আমাদের নিজের, তাই উৎসবও আমাদের নিজের। এই উৎসবে যে শহর থেকে দূরে থাকব, সেটা কত যে কষ্টের তা দূরে যারা থাকে তারাই বুঝতে পারবে।
আমাদের বরাক উপত্যকার পাওনা দাবী গুলো আদায়ের জন্যে সংগ্রাম চলছে, চলবে আর চলতে থাকা খুবই জরুরী। তাই বলে এসব বিষয়কে এই উৎসবে ডেকে আনা কেন, সব নেইর মধ্যেই তো দুর্গোৎসবও হয়, দেয়ালীও, ইদ ও আসে, বড়দিনও। আর শুধু ধার্মিক উৎসব কেন গান্ধী মেলা, বইমেলা, বাণিজ্য মেলারা ও তো দুঃখ কষ্টের হাত ধরেই আসে আর খুশীর বার্তা বইয়ে দিয়ে যায়। ঠিক তেমনি নদীর উৎসবটা নদীরই থাক। ভুল-ভ্রান্তি, পাওয়া-নাপাওয়া, আশা পূরণ- আশা ভঙ্গ সব মিলিয়েই একটা উৎসব পরিপূর্ণতা লাভ করে, আসুন না, জাতি- ধর্ম-বর্ণ- রাজনীতি, নবীন-প্রবীন, সব ভুলে, মনে অল্প কষ্ট পেলে সেইকষ্টটাকে ভুলেই না হয়, জীবন দাত্রীর বন্দনায় সামিল হৈ।
ডঃ পিংকি পুরকায়স্থ ( চন্দ্রানী)
ডেপুটি ডিরেক্টার, ক্রেস
ম্যানেজিং এডিটার,ইজেনাস

Sunday, February 14, 2016

শুধু তোমাকে

শুধু তোমাকেঃ 
ভালোবাসা মানে, কানে কানে নিঃশব্দের কোলাহল। 
শিরায় শিরায় বর্ণহীন তরল এলকোহল। 
অর্থহীন পাগলামির বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। 
ইমোশনাল কবিতার গভীর নীলাকাশ।
মানঅভিমান, মাঝে মাঝে বোকামির আড়ি,
তোমার দেওয়া নীল রঙের ডোরে কাটা শাড়ি।
বেলাশেষে ক্লান্ত হাতে বাজারের ব্যাগ।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখা, শাওয়নদিনের মেঘ।
ভালোবাসার তিলের নাড়ু,আমার মনের পাতা।
দুপুরছুঁয়া লাঞ্চবক্স মেসেজ, আমার গানের খাতা।
ভালবাসা দিনরাত, সকাল দুপুর রাতে।
এমনি করে কাটুক জীবন, হাতটি রেখে হাতে

Monday, May 19, 2014

একাদশ শহীদ চেতনায়, অবচেতন মনে -পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী




আমি সুদূর প্রবাসে,
উনিশের আগুন বুকে,
বাঙলার গান গাই।
ভিনদেশী এক হলুদ পাখী সুর মেলায়,
তারই সুরে।
দুটো অবুঝ পাহাড়ি বালিকা,
মাথা নাড়ে কবিগুরুর সুরের মূর্ছনায়।
আমার ঈশানের বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ,
স্পষ্ট হয়,এই মাটির সোঁদা গন্ধে।
তাই হয়তো কৃষ্ণচূড়া ও হাত বাড়িয়ে,
আমার দখিনের জানালায়।
আকাশের নীলিমায়,
ভেসে ওঠা এগারোটি মুখ,
ছায়া ফেলে মনের শার্সি কাঁচে।
মাতৃভাষার মিষ্টতা,
ছুঁয়ে যায় আমার উদাস প্রহর।
কোন অচিন পাখীর ডানায় করে,
এক মুঠো যুঁই, পাঠিয়ে দেই ,
তোমাদের উদ্দেশ্যে।
জেগে থাকো তোমরা চেতনায়,
অবচেতন মনে।

Tuesday, May 13, 2014

নৈরঞ্জনা-পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী


নৈরঞ্জনা তুমি গল্প শোনাও ,
সূর্যোদয়ের সেই প্রত্যুষের।
চেতনার ঢেউ আছড়ে পড়ুক,
ধূলোময় কাঁচের ঠুনকো দেয়ালে।
নৈরঞ্জনা ! তোমার কুলু-কুলু শব্দে,
হারিয়ে যাই, উরুবিল্বের পরিচয়হীন প্রান্তরে,
চেখে নেই সুজাতার পায়েস।
নৈরঞ্জনা , তোমার শ্রান্তবুকে;
ঢেউ জাগাক আবার, পূর্ণিমার চাঁদ।
তন্দ্রাচ্ছন্ন প্রহর, লুম্বিনির চোখে চোখ রেখে।।
নৈরঞ্জনা, তুমি কবিতা লিখ,
গোপার অশ্রুবিন্দুর শিশিরে।
বিষাদসিক্ত অক্ষরেরা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতরো হয়ে উঠুক,
তিতিক্ষার স্নিগ্ধ উজ্জ্বলতায়।
নৈরঞ্জনা , তোমার কূলে-কূলে লালিত হোক,
শাক্যতরুন সিদ্ধার্থের স্বপ্ন।
নিষ্কাম বুদ্ধের মৈত্রীর মন্ত্র,
ছড়িয়ে পড়ুক শতচ্ছিন্ন প্রাণে।
নৈরঞ্জনা , ভেঙে ফেলো এবার মোহের প্রাচীর,
দৃষ্টিপথ ভেদ করে , মুক্তির ঘুড়ি উড়ে চলুক,
ব্রহ্মাণ্ডের শিরায় শিরায়।
নৈরঞ্জনা , মিলে মিশে যাও,
গঙ্গা-পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র , বরাকের কালো জলে।  
ব্যক্ত হোক আবার সেই সর্বত্যাগীর স্নিগ্ধ স্বরূপ,
মানবতা সঞ্জীবনীর আবাহনে।

Monday, June 3, 2013

একটি প্রেমের কবিতাঃ পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী

 

নামহীন কোনো এক বাউল ,
সেই কবে ,শুষ্ক মাটির বুকে এঁকে দিয়ে গেছে;
চোখের জলের আল্পনা!
ঠিক সেখানে,যেখানে আলোছায়া মাখামাখি;
দেখা হয়েছিল কালকেতু ফুল্লরার।
যেখানে খুল্লনা নিবু-নিবু তেলের কুপি হাতে,
পরম মমতায় খুঁজেছিল বহুকাল ধরে,
সেই ছাগ শিশুটিকে।
গোধূলি বেলার শেষ প্রান্তে যখন,
কালো হয়ে আসে জলবহরের ছায়া,
কালিদাসের শিপ্রাকে ছাপিয়ে যায়,
বেহুলার গণ্ডকী ।
সেই অবেলায় বিদ্যা –সুন্দর পাড়ি দেয়,
জ্যোৎস্না মাখা লাল পাহাড়ের দেশে।
যেখানে নীরস পাথরের বুক ভেদ করে,
ঝমঝম ঝরনা রুকনি- টুকনি,
ভেলা ভাসায় সিধু কানুর নামে।
ঘুম-ঘুম রাতের স্বপ্ন ঘিরে, মন কেমন করা;
কুলুকুলু রূপসা, রজকিনী।
রাধার বুক চেরা ভালবাসা,
নিমাইয়ের প্রানের দোতারায় ।

Friday, May 31, 2013

খেলা- পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী



যে তোকে ভয় পায়,
সে আমি নই।
তাই তো বিদ্যুৎ হয়ে জেগে উঠি বারবার,
তোরই বুকের গভীরে।
ভয় মানে যদি হয় রুদ্রের জটাজাল,
কুলুকুলু গঙ্গা হয়ে বয়ে চলি,
সাগরের টানে।
অথবা চাঁদের মতন জ্বলে উঠি ,
আঁধারের দিনগুনা শেষে।
আসলে তোর আমার এই খেলা চিরদিনের,
জন্ম জন্মান্তরের,
তবু জয় আমারই ,
কারণ আমি বেঁচে থাকি,
এই খেলাকে আঁকড়ে ধরে ।